আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস: গৌরব, ত্যাগ ও অবিচল অঙ্গীকারের দিন

প্রকাশিত: ৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০২৫

১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে এই তারিখে গঠিত হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বিত সশস্ত্র বাহিনী। যুদ্ধের ময়দানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ, বীরত্ব ও অনমনীয় সাহসিকতার ধারাবাহিকতা আজও ধারণ করে রেখেছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী। তাই প্রতি বছর এই দিনটি শুধু স্মরণ-উৎসব নয়; এটি জাতির প্রতি এক অনিবার্য অনুপ্রেরণা যেখানে ইতিহাস, দায়িত্ববোধ ও উন্নয়নের প্রত্যয় মিলেমিশে একাকার।

ইতিহাসের শিকড়ে বীরত্বের আলোঃ

স্বাধীনতার যুদ্ধে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী গঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই এক বিরল উদাহরণ। অনভিজ্ঞ তরুণ, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র সবাই এক সুরে, স্বাধীনতার অদম্য আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। সেই বীরদের রক্তে সিক্ত মাটিই আজকের আধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর ভিত্তি। তাই এ দিবস শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয় এটি বীর শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য।

শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের গৌরবময় ভূমিকাঃ

বর্তমান বিশ্বের যেকোনো শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হয় শ্রদ্ধার সাথে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অবদান বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বীরত্ব, পেশাদারিত্ব এবং মানবিকতায় এ দেশের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা উজ্জ্বল করে তুলেছে।

উন্নয়ন ও মানবিক সেবায় অগ্রণী ভূমিকাঃ

আজকের সশস্ত্র বাহিনী শুধু যুদ্ধক্ষেত্রের যোদ্ধা নয়; তারা মানবিক সেবায়ও অনন্য। পাহাড়ে বা উপকূলে দূর-দুরান্তের দুর্গম এলাকায় সড়ক নির্মাণ, শিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তা, দুর্যোগ মোকাবিলায় দ্রুততম সাড়া সবখানেই সশস্ত্র বাহিনীর নিরলস উপস্থিতি জাতির পাশে এক নিরাপদ আশ্রয়। প্রতিবছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড় কিংবা পাহাড় ধস যে কোনো দুর্যোগে মানুষের প্রথম ভরসা হয় এই বাহিনী।

আধুনিকায়নের নতুন যুগঃ

ডিজিটাল ও প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক বিশ্বে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীও দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। নতুন যুদ্ধবিমান, নৌযান, অত্যাধুনিক সশস্ত্র যান, নজরদারি প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা ইউনিট সব মিলিয়ে একটি স্মার্ট ও সক্ষম বাহিনী গড়ে উঠছে।

মানবিকতার শক্তি

যুদ্ধের ময়দানে শক্তি, কিন্তু মানুষে মানুষের পাশে দাড়ানো এটাই সশস্ত্র বাহিনীর প্রকৃত পরিচয়। তাদের মানবিকতা সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার প্রধান কারণ। পাহাড়ি জনপদের শিশুদের খাতা-কলম থেকে শুরু করে ত্রাণ বিতরণ, চিকিৎসা ক্যাম্প, কৃষকদের সহায়তা এটিই মানবিক বাহিনী হিসেবে তাদের পরিচিতি গড়েছে।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় স্বাধীনতা রক্ষার যে অঙ্গীকার ১৯৭১ সালে আমরা করেছিলাম, সেই অঙ্গীকার আজও অটুট। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং উন্নয়নের প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এগিয়ে যাচ্ছে আত্মবিশ্বাসের সাথে।

এই দিনে জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে শহীদদের এবং সম্মান জানায় সকলে যারা দেশের নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য দিনরাত প্রহরায় আছেন।