বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সাজেকে র‍্যালী ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ৯:১৮ পূর্বাহ্ণ, জুন ৬, ২০২৫

প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হোন!- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাজেক পরিবেশ রক্ষা কমিটির উদ্যেগে আজ ৫জুন ২০২৫,বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে র্যালি পরবর্তি উজোবাজারে এক সমাবেশে করা হয়।

বাঘাইহাট,গঙ্গারাম ও বঙ্গলতলী এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে শতাধিক সাধারণ লোকজন এতে অংশ গ্রহন করেন। দ্ব-পদা লাডু মুনি বাজার থেকে সকাল ৯টায় সাজেক পর্যটন রোডে র্যালি শুরু হয়ে উজোবাজার ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) অফিসের সামনে সমাবেশে মিলিত হন।

সাজেক পরিবেশ রক্ষা কমিটির সভাপতি ও সাজেক কারবারী সমিতির সভাপতি মি,নতুন জয় চাকমার সভাপতিত্বে, সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও সাজেক পরিবেশ রক্ষা কমিটির সদস্য মি,বাবু ধন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, সাজেক জুম চাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মি,জোতি লাল চাকমা ও ৩৬ নং সাজেক ইউপির ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার মি,পরিচয় চাকমা।।

বিশ্ব পরিবেশ দিবসটিকে মনে রাখার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সাজেক জুমচাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মি,জোতি লাল চাকমা। কাঠব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল ধ্বংস করার অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন,আশির দশকে পার্বত্য বনাঞ্চল আর বর্তমানের পার্বত্য বনাঞ্চল আকাশ ছোঁয়া ব্যবধান।এক সময় চাম্পাফুল, গর্জন সহ নানা প্রজাতির গাছ-গাছালিতে যেখানে আকাশ দেখা যেত না,সেখানে আজ কাচলং ফরেষ্ট এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ঠেগা-বরকল-বিলাইছড়ির পরবর্তি মূলত: কাচলং ফরেষ্ট অঞ্চলের গাছগুলো কাঠব্যবসায়ী দারা কর্তন করে বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়েছে।। বর্তমান উজোবাজারটি ও এক সময় বনাঞ্চল ও বিরল প্রজাতির বন্যপ্রানীতে ভরপুর ছিল।কাচলং-গঙ্গারাম নদীতে ছিল প্রচুর মাছ। পার্বত্যজেলা গুলোতে সেটেলার পুনর্বাসন করার পর পর কাচলংসহ অপরাপর নদীগুলোর মাছ ধ্বংস করা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন,সেটেলার বাঙ্গালীদের কাছ থেকে মাছ ধরার বিভিন্ন পদ্ধতি শিখে আজ পাহাড়িরাও মাছ ধরে খালে মাছ শুন্য করে তুলেছে। বন্যপ্রানী সংরক্ষণে বন্য প্রানী শিকার বন্ধ করা এবং বনাঞ্চল রক্ষার্থে কাঠ ব্যবসা বন্ধ করার দাবি তুলে ধরেন তাঁর বক্তব্য।

আমাদের পরিবেশ আমরাই নষ্ট করি কথাটি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ৩৬ নং সাজেক ইউপি ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার মি,পরিচয় চাকমা। পারিপার্শিক পরিবেশ ঠিক না থাকার কারনে ম্যালেরিয়া প্রভাব বেড়েছে। যত্রতত্র পলিটিন মাটিতে পেলে ঐ পলিটিনো পানি জমা হয়ে এক ধরনের জীবানুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।যার ফলে আমরা ম্যালেরিয়া সহ নানা রোগের আক্রান্ত হচ্ছি।। যত্রতত্র পলিটিন পেলা বন্ধ করতে হবে। নির্ধারিত জায়গায় আগুনে পুড়ে পলিটিন ধ্বংস করতে হবে। একটা গাছ কর্তন করে যেখানে ৫/৭টা গাছ লাগানোর কথা সেটা কিন্তু আমরা করছি না। যার ফলে বন উজার হচ্ছে। জীবিকার প্রয়োজনে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় আমাদের বনাঞ্চল সৃজন করতে হবে। মানুষ যে হারে বাড়ছে, সে হারে বন বাড়ছেনা বলেও তিনি তাঁর বক্তব্য দাবি করেন।

প্রকৃতিতে প্রানীর জর্ম্ম, পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে আমাদের করণীয়- কথাটি উল্লেখ করে বক্তব্য তুলে ধরেন সাজেক পরিবেশ রক্ষা কমিটি ও সমাবেশের সভাপতি মি,নতুন জয় চাকমা। আজকের এই দিনটি সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে। যে কারনে আমরা একত্রিত হয়েছি সেটা ইতিমধ্য আমরা জেনেছি।পৃথিবীতে কোন কিছুই স্হায়ী নয়। আজকে যে রাজনৈতিক ও ধর্মীয়ভাবে আমরা দ্বিধাবিভক্তি তাও স্হায়ী নয়। আমাদের জাতিগত অধিকার নেই,রাজনৈতিক অধিকার নেই। ভাগ করে শাসন করার রাষ্ট্রীয় শাসন নীতিতে আমরা পরিচালিত হচ্ছি। রাজনৈতিক ও জাতিগত অধিকার নিয়ে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।ভবিষ্যতে যাতে আমাদের প্রজর্ম্ম ঠিকমত বেঁচে থাকতে পারে তার জন্য আমাদের কে পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি বিরল প্রজাতির প্রানী ও গাছ-গাছালি হাড়িয়ে গেছে উল্লে খ করে তিনি বলেন,অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ও মৌসুম ভিক্তিক ঠিকমত ফলন না হওয়ার পিছনে প্রধান কারন বন্যপ্রানী ও বনাঞ্চল ধ্বংস করা। বর্তমানে বনাঞ্চল ও পাহাড় ধ্বংস করে লংগদু-নান্যাচর সড়ক নির্মাণ কাজ সরকারী ভাবে করা হচ্ছে।তাতে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়বে দাবি করে লংগদু-নান্যাচর সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ করার দাবি জানান।
বর্তমানে বাচ্চুরি মৌসুম। প্রত্যেকটি বাজারে ঢোল দিয়ে বাচ্চুরি বিক্রি /নিধন বন্ধ করার নির্দেশ প্রদান করে সভাপতি তাঁর বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে র্যালি ও সমাবেশ সমাপ্ত ঘোষনা করেন।