মুসলিম ব্লক ক্লিনিক বন্ধ পাঁচ মাস, চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

প্রকাশিত: ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫

রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার মারিশ্যা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত মুসলিম ব্লক কমিউনিটি ক্লিনিকটি টানা পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

এলাকাবাসী জানান, গত এক বছর ধরে এই ক্লিনিকটি ছিল আশেপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের চিকিৎসার প্রধান ভরসাস্থল। কাছাকাছি আর কোনো সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকায় মানুষ এখানে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা, টিকাসহ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতেন। কিন্তু হঠাৎ ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তাদের কয়েক কিলোমিটার দূরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থের উপর বাড়তি চাপ পড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, “এই ক্লিনিক চালু থাকায় আমরা স্বল্প খরচে চিকিৎসা পেতাম। এখন বাধ্য হয়ে সামান্য অসুস্থতার জন্যও দূরে যেতে হচ্ছে। এতে বাড়তি সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা।”

একই কথা জানান মোকশেদা আক্তার তিনি বলেন, “প্রতিদিন তো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়া সম্ভব হয় না। জরুরি পরিস্থিতিতে ক্লিনিক না থাকায় বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ক্লিনিকটি ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত গত বছর ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এক বছর কার্যক্রম চললেও গত ৩০ জুন থেকে সেবাদানকারী কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (CHCP) শাহনাজ আক্তার চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ায় ক্লিনিকের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

মারিশ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আপন চাকমা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ক্লিনিক বন্ধ থাকায় এলাকাবাসী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারের নেওয়া গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি ব্যাহত হওয়া হতাশাজনক। আমি সরকারের কাছে দ্রুত নতুন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ এবং ক্লিনিক ভবনের সংস্কারকাজ সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছি।”

এ বিষয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, “শাহনাজ আক্তার অন্যত্র যোগ দেওয়ায় ক্লিনিকটি বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। যেহেতু (CHCP) স্থানীয় ঠিকানার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাই অন্য ক্লিনিক থেকে বদলি দেওয়া সম্ভব নয়। তবে শিগগিরই নতুন জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সেবা চালু করা হবে।”

স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত নতুন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করে ক্লিনিকটি পুনরায় চালু করা জরুরি। নইলে প্রান্তিক মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া আরো কঠিন হয়ে পড়বে।